| |
               

মূল পাতা সারাদেশ জেলা ভারতে ভুয়া খবর প্রচারিত; হিন্দু মহিলা বললেন, আমাদের মন্দিরে হামলা আমরা জানলাম না!


ভারতে ভুয়া খবর প্রচারিত; হিন্দু মহিলা বললেন, আমাদের মন্দিরে হামলা আমরা জানলাম না!


রহমত নিউজ     17 August, 2024     04:42 PM    


৫ আগস্ট স্বৈরশাসক হাসিনা সরকারের পতনের পর নেত্রকোনার বিভিন্ন মন্দির, বিশেষ করে জেলা শহরের সাতপাই রামকৃষ্ণ মিশন এবং ইসকন মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের খবর প্রচারিত হয় ভারতীয় বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে। এ ছাড়া দেশীয় কিছু মাধ্যমেও এমন ভুয়া খবর প্রচার হতে থাকে। এসব খবর দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছেন সেখান স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন। 

ভারতীয় টিভি চ্যানেলে প্রচারিত এসব ভুয়া খবরের ব্যাপারে তারা বলছেন, এসব খবর দেখে আমরা রীতিমতো অবাক হয়েছি। আমাদের মন্দিরে হামলা বলা হচ্ছে অথচ আমরা জানলাম না, জেনে গেল ভারতীয় টিভি চ্যানেল! 

গতকাল শনিবার (১৬ আগস্ট) নেত্রকোনা শহরের সাতপাই এলাকায় থাকা ইসকন মন্দিরে (জগন্নাথ বল্লভ মন্দির) গেলে এসব কথা বলছিলেন মন্দিরের ভেতরে অবস্থানরত প্রমীলা সরকার।

প্রমীলা সরকার বলেন, এই ইসকন মন্দিরের সঙ্গেই আমার বাসা। নিয়মিত মন্দিরে আসি। এখানে হামলা বা ভাঙচুরের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আপনিও ঘুরে দেখুন সবকিছু স্বাভাবিক। তবে ভারতীয় রিপাবলিক বাংলা নামে টিভিতে আমাদের মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরের খবর দেখে অবাক হয়েছি। আমাকে ফোন দিয়েছে আত্মীয় স্বজনেরা। আমাদের মন্দির হামলা আমরা জানলাম না। অথচ তারা জেনে গেল। আরও বেশ কিছু মাধ্যমেও এসব মিথ্যা সংবাদ প্রচার হয়েছে, এসব কাম্য নয়। এই শহরে হিন্দু-মুসলিম আমরা সবাই মিলে মিশে থাকি যুগ যুগ ধরেই। একে অন্যর বিপদে পাশে দাঁড়াই।

মন্দিরের বিভিন্ন দায়িত্বে থাকা চৈতন্য দাস ও বিদুর দাস বলেন, আমাদের মন্দিরে কোনো হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। কেউ যদি এমনটা প্রচার করে থাকে, তবে সেটা মিথ্যা।

ইসকন মন্দির পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করতে দেখা যায় পরিচালনা কমিটির সদস্য মুক্তা সরকারকে। তিনি বলেন, মন্দিরে কেউ হামলা করেনি। সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে একই সড়কে থাকা শ্রীরামকৃষ্ণ মিশনে গিয়ে জানা যায় সেখানেও কোনো হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। শ্রীরামকৃষ্ণ মিশনের তত্ত্বাবধায়ক উজ্জ্বল সরকার বলেন, মন্দিরে কোনো হামলা বা ভাঙচুর কিছুই হয়নি। সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে মন্দির। ৫ আগস্ট আমাদের মন্দিরের গেটের সোজা সড়কের বিপরীতে থাকা একজনের (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) ব্যক্তিগত চেম্বার ভাঙচুর হয়েছে। অনেকে হয়তো ভুল করে ভেবেছে যে ওই দিন আমাদের মন্দির ভাঙচুর হয়েছে।’ মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য পরিমল চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘আমরাও দেখেছি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মিডিয়ায় বলছে যে আমাদের মন্দিরের হামলা ও ভাঙচুর হয়েছে। এসব দেখে তো আমরাও হতবাক হয়েছি। পরে ফেসবুক পোস্ট করে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। কোনো ধরনের হামলা হয়নি বলে জানিয়েছি। যেন কেউ এ বিষয়ে ভুল না বোঝে। মন্দিরের গেটের বিপরীতে একজনের ব্যক্তিগত চেম্বার ভেঙেছে সেটাকে হয়তো অনেকে মন্দির ভাঙা বলে চালিয়ে দিয়েছে। কমিটির অপর সদস্য রঞ্জন সাহা বলেন একই কথা।

মন্দিরের পাশের বাসার স্বর্ণালী ভট্টাচার্য বলেন, আমাদের মন্দিরে হামলা–ভাঙচুরের খবর দেখে অবাক হলাম। বাইরে থেকে সবাই ফোন দিল। আমাদের বাসা মন্দিরের সঙ্গেই। মন্দিরের গেটের সামনে রাস্তার বিপরীতে ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্যের একটি চেম্বার ছিল দোকানসহ। ওইটাতে ওই দিন কারা যেন ভাঙচুর করেছে শুনেছি। ওইটার সঙ্গে মন্দিরের কী সম্পর্ক বুঝলাম না। কারা এমন খবর দিলো তা–ও অজানা। ওই দিন চেম্বার ভাঙচুর করলেও আমাদের মন্দিরের দিকে কেউ চোখ তুলেও থাকায়নি। এখানে আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই মিলেমিশে বসবাস করি।

এ বিষয়ে জেলার হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাড. শীতাংশু বিকাশ আচার্যের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিটন পণ্ডিত বলেন, আমাদের জেলায় কোনো মন্দির বা উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর কিছুই হয়নি। কোথাও এমনটা শুনিনি।

উল্লেখ্য; ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর জেলার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক চেম্বার, দোকান পাট ও বাসা বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এদিন সাতপাই মন্দিরের সড়কে থাকা সাবেক ছাত্রলীগের নেতা অপু সরকার ও ছাত্রলীগ নেতা মৃণাল কান্তি ভট্টাচার্যের চেম্বার ভাঙচুর করা হয়। তবে মন্দিরে কোনো হামলা হয়নি।


এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: ময়মনসিংহ নেত্রকোণা নেত্রকোণা সদর